পথশিশুরাও মানুষ; আসুন ওদের স্বাভাবিক জীবন উপহার দিই
|আমাদের দেশে সকল ধর্মের ধর্মীয় উৎসব যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ ধর্ম কি তা সম্পর্কে জানতে পারেন জন্মের পরে, কেউ ধর্ম পালন করে নিজের ইচ্ছাই। কেউ কেউ সমাজে চলমান ধর্মের বাহিরে নিজেকে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেই সন্তুষ্ট থাকেন। ধর্ম যাই হোক না কেনো মূলত সকল ধর্মের প্রধান উপজীব্য বিষয় সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টিকে নিয়ে। মানুষ সৃষ্টিকর্তার সর্বোচ্চ সুন্দর সৃষ্টি। মানুষই একমাত্র জীব যার বিবেকবোধ আছে। সৃষ্টির সেরা জীব হওয়া শর্তেও বিবেকবান এ মানুষ তাঁদের খেয়ালের বশে কুলশিত করছে সমাজ। সৃষ্টি হচ্ছে পাপের। যে পাপে পাপী হয়েও পাপের বোঝা বাড়িয়েই চলেছি আমরা। আমোদে গড়া জীবনে সাময়িক সুখের জন্য বিপুল অর্থবিত্তের অপব্যবহারে জীবনের পরিপূর্ণতা খুজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েও নিজেকে জয়ী ভাবছি। ঠিক এই অবক্ষয় থেকেই জন্ম হচ্ছে পথশিশুর? যাঁরা একবেলা পেটভরে খাবার আশায় অনাহারে ছুটে বেড়ায় বাংলার পথে পথে। কিভাবে এড়িয়ে যাবেন তাঁদের? আপনি বিবেকবান? মাথায় অনেক জ্ঞানের বোঝা নিয়ে ঘোরা-ফেরা করেন, কখনো নিজের জানা মতে কোনো খারাপ কাজ করেন নি কিন্তু পথশিশুদের নিয়ে একবার ভেবেছেন কি? না! ওদের জন্ম পথে নয়! ওদের পথে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নিজের পাপ পথের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পথের মতো সমাজও নির্বাক। তাই ভাবনা চিন্তা করে নাম দিয়েছে ওদের ‘‘পথশিশু’’। ওরা কি মানব সন্তান নয় নাকি পথই প্রসব করেছে ওদের এ প্রশ্ন কাদের কাছে রাখি বলুনতো? সমাজ তো নির্বাক তাঁর জ্ঞানের পরিধি অনেক কিন্তু বর্তমানের যান্ত্রিকতায় জ্ঞানের গতি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে পথশিশুদের জায়গা নেই? আমরা একমাস রোযা করি কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন নির্বাক সমাজে পথশিশু ক্ষুধা নিবারণ না করতে পেরে বছরের প্রত্যেকটি মাসেই রোযা রেখে চলেছে। তাঁদের ক্ষুধা নিবারণের দায়ভার কার? যাঁরা এই ক্ষুধার জ্বালায় ক্ষুধার্ত বড়ো চোখ তৈরী করতে ওদের পথে ফেলেছে তারাই আবার ওদের লোভ দেখিয়ে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার জগতে। বাহ!কি সুন্দর পদ্ধতি! নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিবেকের যথার্থ ব্যবহার?
২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারী প্রথম আলোর চিঠিপত্রে সারা দেশে প্রায় ৪ লাখের বেশি পথশিশু এবং ২ লাখেরও বেশি পথশিশুর বাস ঢাকায় এ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ২৮ জুন ২০১২ তে দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখ এবং অনুমান করা হয়েছে ২০১৪ সাল নাগাদ এর সংখ্যা ১২ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে। ধারণা করা যায় পথশিশুর সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি এবং এ সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে প্রতিনিয়ত। ওদের বয়স ১৮ এর নিচে; নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে ওরা। সরকার কি পারে না অন্তত এদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে? তাছাড়াও বেসরকারি সংস্থা সহ সমাজের বিত্তশালী মানুষদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। কারো কারো আচরণে ওদের প্রতি এতোটাই ঘৃণার প্রকাশ পায় যা খুবই কষ্টদায়ক। এ নির্মমতা কেনো ওদের প্রতি? ওরাও তো মানুষ ওরা তো সমাজেরই একটা অংশ তাইনা? পথশিশু বলে কি ওদের জ্ঞান নেই? আছে নেই শুধু বেড়ে ওঠার সুুযোগ। তাঁদের ক্ষুধার্ত পেটে কিছু খাবারের দেবার বদলে আমরা লাথি দিতে পিছু পা হইনা। সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের যুগে যুগে গেয়ে গেছেন মানুষের জয়গান তিনি বলেছেন, গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান! সাম্যতায় সবাই সমান সবার গায়ে লাল রক্তের ধারা প্রবাহমান। তবে কেনো এই বৈষম্য? নির্বাক সমাজের জ্ঞানী মস্তিস্কের কাছে প্রশ্ন থেকে যায়? ধুলায় মলিন দুখের পোষাকে পথশিশুরা দুবেলা দুইমুঠো খাবারেই খুশি। এখন খাবারের বদলে স্বার্থান্বেষী মহল ওদের হাতে তুলে দিচ্ছে নেশার অভিশপ্ত স্পর্শের পাপ, অস্ত্র। তাঁরা বেড়ে উঠতে চায়, আপনার ছোট্ট সন্তানটির মতোই। ওদের চাহিদা মেটাতে কেউ এগিয়ে আসে না বলে পথের কোলেই পরে থাকে ওরা নিশ্চিন্তে। ওদের কেউ যদি নিজে নিজে বেড়ে উঠতে চায় বা উঠতে শুরু করে তাকে সম্মুখীন হতে হয় নির্বাক সমাজের লালায়িত মূর্তির। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন? কেউ কি বলতে পারে ওই পথে পরে থাকা শিশুটি একদিন এদেশের উচু সারির কেউ হবে না।
সমাজের এই মানব শিশুগুলোর পাশে দাড়িয়ে তাদের জনসম্পদে পরিণত করা কি আমাদের লক্ষ্য হতে পারে না। আমরা কি পারি না ওদের দায়িত্ব নিতে; একটু সুখ ভাগ করতে একসাথে। নিজ নিজ অবস্থান হতে মহৎ মানসিকতায় সুহৃদ পদক্ষেপই পারে পথশিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের আলো দেখাতে। পথশিশুদের অবহেলা না করে পথ থেকে একবার বুকে টেনে নিয়ে বেড়ে ওঠার অধিকার দিন, দেখবেন একদিন ওরাই দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আসুন ওদের দিকে ভালোবাসায় হাত বাড়িয়ে দিই সাম্যতায় সুন্দরের পথে। ওরাও মানুষ সবার সম্মিলিত প্রয়াসে পথশিশুরা ফিরে আসুক তাদের স্বাভাবিক জীবন।