বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করনীয় ও সচেতনতা
দেশের প্রায় ২৮ টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরো শোচনীয় দিকে যাচ্ছে। আমরা চাই অন্তত মানুষ সচেতন হোক তাই এ সচেতনতামূলক পোস্ট।
বন্যাকালীন প্রস্তুতি
১. বন্যায় যদি ঘরবাড়ি ডুবে যায়, নিকটস্থ কোন উঁচু স্থানে বা বাঁধে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহন করুন।
২. নিজ বসতবাড়িতে অবস্থান করা সম্ভব না হলে বাড়ির কাছাকাছি কোথাও অবস্থান করুন।
৩. প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘরের চালের নিচে পাটাতনে রাখার ব্যাবস্থা করুন।
৪. কোন মতেই দালাল বা টাউটদের পরামর্শ শুনে নিজ গ্রাম ছেড়ে পরিবার পরিজন সহ শহরে জাবেন না।
৫. নিজ গ্রামে থাকা কোনমতেই সম্ভব না হলে, পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে, যা বন্যা কবলিত নয়, আশ্রয় গ্রহন করুন বা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহন করুন।
৬. টিউবওয়েলের পানি পান করুন। টিউবওয়েলের পানি পাওয়া না গেলে পানি ফুটিয়ে পান করুন অথবা পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট বা ফিটকিরি ব্যাবহার করুন।
৭. বন্যার সময় বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে, এগুলির প্রতিষেধক টিকা বা ইনজেকশন গ্রহন করুন। আপনার এলাকায় কার্যরত মেডিক্যাল টিমের অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিন েএবং প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিন।
৮. আপনার ঘরে রক্ষিত কার্বলিক এসিড এর বোতলের ছিপি খুলে রাখুন। এতে সাপ আপনার ঘরে ঢুকবে না।
৯. সরকারি ও বেসরকারি ত্রান বণ্টনকারীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করুন।
১০. ত্রাণসামগ্রী যা পাওয়া যায় তা দিয়ে অভাব মিটানোর চেষ্টা করুন।
১১. বন্যার পরেই বন্যাকবলিত জনিতে কি ফসল ফলানো যায়, তার চিন্তাভাবনা করুন বা এ বিষয়ে কৃষি কর্মির সাথে আলোচনা করুন।
১২. বন্যাকবলিত এলাকার দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে প্রতিটি বন্যা কবলিত গ্রামের নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করুন এবং সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
১৩. ফসলের বীজ নিরাপদ স্থানে সংরক্ষন করুন।
১৪. বন্যা প্লাবিত পুকুর বা দিঘিতে ডালপালা ফেলে মাছ ধরে রাখার ব্যাবস্থা করুন।
বন্যার সময় নারীদের করনীয়
১. দুর্যোগের জন্য আগে থেকেই অর্থ সঞ্চয় করুন।
২. বন্যার আগেই রান্নাবান্নার জন্য আলগা চুলা ও জ্বালানি জোগাড় করে রাখুন।
৩. ছেলে মেয়েদের সাঁতার শেখান।
৪. অতিরিক্ত বন্যায় যাতে বাচ্চারা কষ্ট না পায় সেইজন্য আগে থেকেই নিরাপত্তা আশ্রয় হিসেবে আত্মীয় বা প্রতিবেশীর বাড়ি আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করে রাখুন।
৫. গর্ভবতী নারীর জন্য নিরাপদ আশ্রয় ঠিক করে রাখুন এবং এলাকার ধাই ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। বাড়িতে নিরাপদে সন্তান প্রসবের উপকরণ জোগাড় করে রাখুন।
৬. বন্যার সময়ে সম্ভাব্য মেয়েলি রোগ- ব্যধি প্রতিকারের জন্য বন্যার আগে
স্থানীয় পল্লী চিকিত্সক, ডাক্তার, সরকারি, বেসকারি সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
৭. চলাফেরার জন্য ছোট ডিংগি নৌকা তৈরি বা কলাগাছের ভেলা তৈরির জন্য বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কলাগাছ লাগান।
৮. নারীদের বন্যাজনিত সমস্যার সমাধানে পুরুষরা যাতে এগিয়ে আসে সে ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন৷
বন্যার সময় রোগব্যাধি থেকে রক্ষায় করনীয়
১. খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। মশা-মাছি, কলেরা ও ডায়রিয়া রোগের জীবানু ছড়ায়। খাবার ঢেকে রাখলে কলেরা ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২. পচা বা বাসী খাবার খাওয়া যাবে না। এতে ডায়রিয়া হতে পারে।
৩. ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
৪. খাবার আগে হাত ভালো করে সাবান বা ছাই দিয়ে ধুতে হবে।
৫. পায়খানার পর হাত ভালো করে সাবান অথবা ছাই দিয়ে ধুতে হবে।
৬. কখনোই বন্যার পানি বিশুদ্ধ না করে পান করা যাবে না।
বন্যা পরবর্তী করনীয়
১. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথা সাথে নিজ ভিটা বাড়িতে ফিরে যান।
২. বাড়িঘর বসবাসযোগ্য করুন এবং বাড়িতে নানা ধরনের শাকসবজি চাষের উদ্যোগ গ্রহন করুন।
৩.নিজ জমি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহন করুন কৃষি কর্মীদের সাথে আলোচনাক্রমে স্বল্প সময়ে উৎপাদনযোগ্য ফসলের চাষ করুন।
৪. এককভাবে ঋণের চেষ্টা না করে যৌথভাবে ঋণ গ্রহনের প্রচেষ্টা চালালে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
৫. বন্যার পর পরই নানা রকম রোগ (টাইফয়েড, ডাইরিয়া, আমাশয় ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে। তাই রোগ প্রতিষেধক টিকা বা ইনজেকশন নিন।
৬. ঘরবাড়ি পুনর্র্নিমাণে সাহায্যের জন্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন।
৭. ঘরবাড়ি পুনর্র্নিমাণের জন্য কোন সরকারি সাহায্য (টিন) পাওয়া যাবে কিনা সে সম্বন্ধে ইউ. পি. চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এ ব্যাপারে যৌথভাবে প্রচেষ্টা চালালে ভাল হবে।
৮. বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ দিঘি বা ঘেরের পাড় মেরামত করে পুকুরে জাল টেনে চাষকৃত মাছ আছে কিনা দেখে পরবর্তীতে শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে পুনরায় মাছের পনা ছেড়ে চাষ শুরু করা যেতে পারে।
৯. প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে, সম্ভব হলে মাছ চাষের জন্য ঋণ গ্রহণের লক্ষে মৎস্য কর্মকর্তার সহায়তা গ্রহন করা যেতে পারে।
১০. আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমন ধানের বীজতলা পানি দিয়ে পাতায় জমে থাকা পানি বা কাদা ধুয়ে দেয়া যেতে পারে এবং পাতা শুকানোর পর কিছু ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১১. রোপা আমন ধানের চারার সঙ্কট হলে ইতোপূর্বে রোপনকৃত ভাল জমি থেকে প্রতি গোছায় দু’ একটি কুশি ভেঙে নতুন জমিতে রোপন করা যেতে পারে।
বিঃদ্রঃ পোস্টের সকল তথ্য সংগৃহীত। জনস্বার্থে সবাইকে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি।
Share this:
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Tumblr (Opens in new window)
- Click to share on Pinterest (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to share on Reddit (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to email a link to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)
Related
Related Posts
- স্বপ্নের ডানা মেলতে আসছে স্বপ্নচড়ুই No Comments | Jan 5, 2016
- নওগাঁর বানভাসিদের পাশে দাঁড়ান…. No Comments | Aug 17, 2017
- সাপাহারে শীতার্তদের পাশে আলোর সন্ধানে নওগাঁ No Comments | Dec 6, 2015
- বদলগাছীতে প্রতিবন্ধি শিশুকে হুইল চেয়ার প্রদান No Comments | Jul 22, 2016