শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা
|সম্প্রতি শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে গিয়েছিলাম। সেখানে শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা’র স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্মারকের পাশে কিছুক্ষণ দাড়িয়েছিলাম। শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে এসেছিলো শির। এ মহা মানুষটির সম্পর্কে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জানা দরকার। তাই আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। তিনি একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (তৎকালীন রিডার) ছিলেন।
শামসুজ্জোহা ১লা মে ১৯৩৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়াতে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৪৮ সালে বাঁকুড়া জেলা স্কুল হতে মাট্রিকুলেশন, ১৯৫০ সালে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি ১৯৫৩ সালে স্নাতক(সম্মান) এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ হতে তিনি পিএইচডি ও ডিআইসি ডিগ্রিলাভ করেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব গ্রহন করেন।
১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৯৬৬-এর ছয় দফা ও ১১ দফা দাবিতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে মিছিল করা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান শহীদ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সেনানিবাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়। এই দুটি হত্যাকান্ডে আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে ওঠে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, সান্ধ্যকালীন আইন জারি করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল বের করলে অনেক ছাত্রের জীবননাশের আশঙ্কা থাকায় প্রক্টর শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাসদস্যদের। কিন্তু সেনাসদস্যরা তার কথা উপেক্ষা করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। তিনি বলেছিলেন “কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে।”
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি দেশের জনগণকে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি, ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান, ১৫ ফেব্রুয়ারি, সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক শহীদ শামসুজ্জোহার মৃত্যু দেশেবাসীকে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গন্য করা হয়।
জোহার মৃত্যু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলো এবং প্রভাব ছিলো সূদূরপ্রসারী, যা দেশকে স্বাধীন করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলো। দেশ স্বাধীনের পর তার অবদানের কৃতজ্ঞতাস্বরুপ তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবির সম্মানে ভূষিত করা হয়। তার মৃত্যুর পরপরই তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার নামানুসারে নবনির্মিত আবাসিক হলের নামকরণ করেন শহীদ শামসুজ্জোহা হল। নাটোরে তার নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ প্রতিবছর জোহা সিম্পজিয়াম পালন করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেশের শিক্ষকসমাজ জোহার মৃত্যুদিবসকে “জাতীয় শিক্ষক দিবস” হিসেবে পালনের দাবী জানিয়ে আসছে। তার নামানুসারে নির্মিত আবাসিক হল শহীদ শামসুজ্জোহা হলের মূল ফটকের পাশে একটি স্মৃতি স্মারক স্ফুলিঙ্গ নির্মাণ করা হয় ২০১২ সালে।
আমরা বিভিন্ন জায়গাতে ভ্রমণ করি কিন্তু তেমন বিশেষভাবে অবলোকন করি না। যার জন্য অজানা থেকে যায় অনেক কিছু। উচিত হলো যেখানেই যাওয়া হোক একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ। যাতে আপনি সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে অন্যদেরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন।
অামি যেখানেই যাই জানার চেষ্টাটা অব্যাহত থাকে। তাই বোধকরি কোন বিষয়ে আক্ষরিক চিন্তা ভাবনা না করে গভীরতা বিশ্লেষন করা উচিত।
সবাইকে জানানোর উদ্দেশ্যেই আমার এই প্রয়াস। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এখানে যে তথ্য গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তার কিছুঅংশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।
-মো. আরমান হোসেন
সাংবাদিক
বদলগাছী প্রেসক্লাব, নওগাঁ।
ও
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, আলোর সন্ধানে
Email: [email protected]
Web: alor-sondhane.org