প্রসঙ্গটা ‘‘মা”-কে নিয়ে…!
|বয়সটা তখন আট এর কোঠায়। আমার কি এক অজানা রোগ হয়েছিল; স্থানীয় চিকিতসক আমাকে ফিরিয়ে দিলেন আল্লাহকে ডাকতে বললেন সবাই..। আমি কোনো কিছুই খেতে পারতাম না। খাবার মুখের সামনে নিয়ে আসা হলে খাবার না খাওয়ানোর জন্য হাতজোড় করতাম। মা শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতেন। আমার এখনও মনে আছে সেবার যখন চিকিতসার জন্য আমাকে নওগাঁ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন আমি উচ্ছসিত ছিলাম। সবাই পাশে থাকতো ভালোই লাগতো; ভয় একদমই নেই। যার কষ্ট সম্পর্কে জ্ঞানই নেই সে পরিনতির জন্য কষ্ট পাবে কিভাবে?? মায়ের মুখের দিকে তাকানো যেতো না; কেঁদে কেঁদে মায়ের চোখদুটো রক্তবর্ণ..।
আমাকে হারানোর অজানা আশংকায় মা শুধু আমাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতেন; আমিও কেঁদেছিলাম মায়ের কান্না দেখে কিন্তু কান্নার কারণটা যে আমি তা আমার জানা ছিলো না।মাঝে মাঝে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসতো, মাথা ঘুরতো কিন্তু একদম চিন্তা হতো না কেননা আমি জানতাম যে আমার যাইহোক না ক্যানো মা নিশ্চিত বুকে আগলিয়ে সামলে নেবেন। ছোটবেলা থেকেই আমি অর্নগল কথা বলতাম।হাসপাতালে যাওয়ার সময় প্রয়াত মোরশেদ স্যারের জিজ্ঞাসায় অকপটে বলেছিলাম স্যার আমার অসুখ হয়েছে আমি নওগাঁ যাচ্ছি। অসুখ কি কে বুঝতো তখন আনন্দের বিষয় হলো নওগাঁ যাচ্ছি। নতুন শহর, নতুন মানুষ; কি মজা। শুধু মাঝে মাঝে ভাবনা হতো মনে মা এতো কাঁদে ক্যান..??
ভাবতাম যাক যে কারণেই হোক আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা তো হচ্ছে!ঔষুধ খেতে বরাবরই বাজে লাগতো আমার। ঔষুধের জন্য পীড়াপীড়ি চলতো। আমার এক মামা সেবার আমাকে একটা টেনিস বল কিনে দিয়েছিলেন তাঁর শর্ত ছিলো “ঔষুধ খেতে হবে ঠিকমতো” টেনিস বলটা পাওয়ার আনন্দে ভাবতাম ভালোই তো সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে এভাবেই চলতে থাক না ক্ষতি কি? এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিতসাই সেরে উঠলাম আমি ধীরে ধীরে..। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সেবার অনেক বেগ পেতে হয়েছিল আমার, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিলো আমার মায়ের..। তারপর আর কেনো বড়ো ধরনের রোগ হয়নি আমার এ পর্যন্ত।
আজ আমি অনেক বড়ো হয়েছি এখন আর কেউ খেতে বললে না করিনা, বরং খেয়ে সব সাবাড় করে বিনয়ের সাথে আবার খাবার দিতে বলি..!! যদিও নিয়মিত, সময় মেনে খাওয়া কমই হয় এখন। শৈশবের অনেক স্মৃতি আছে আমার, সব লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। সেই নদীতে ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার কাটা, সারা গায়ে ধূলো মেখে ঘরে ফেরা, বড়ো ভাইয়ের সাথে ঝগড়া আরো কতো কি; সবকিছুতেই মায়ের সংস্পর্শ রয়েছে। ছোটবেলার ডানপিঠে স্বভাবটার আঁচ এখনো রয়ে গেছে আমার মধ্যে..। এখনও মাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করি আমার লেখালেখির জন্য..। মা আমার প্রথম শিক্ষক, যার কাছ থেকে আজ অবধি অনেক অনেক শিখেছি..।
মা দিবসে বিশ্বের সকল মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা “মা” নামক এই ভালোবাসার খনিকে হারিয়েছেন তাঁদের জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আর যারা সমাজে পথশিশু হিসেবে পরিচিত, যারা মা-বাবার পরিচয়, ভালোবাসা হতে বঞ্চিত তাদের জন্য সমবেদনা ও শুভকামনা রইলো। কোনো মাকে যেনো বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়। বিশ্বের সকল মা ভালো থাক আজীবন।
-মো. আরমান হোসেন
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
আলোর সন্ধানে নওগাঁ।