ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ

ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ
ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ

কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে অতীত। এখনও অতীতের কিছু গৌরবজ্জল নির্দশন অতীতের রোমন্থনের আবহ সৃষ্টি করে। এমনি ঐতিহাসিক নিদর্শন নওগাঁর কুসুস্বা মসজিদ। ৫০০ বছরের পুরানো এই মসজিদটি নওগাঁস্থ মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত। ঐতিহাসিক এই নির্দশনটির দুরুত্ব নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে ৩৮ কিলোমিটার। মসজিদের প্রবেশদ্বারে বসানো ফলকে মসজিদের নির্মাণকাল হিজরি ৯৬৬ সাল (১৫৫৪-১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দ) উল্লেখ রয়েছে। আফগানী শাসনামলে শুর বংশের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ এর আমলে জনৈক সুলায়মান নামক একজন ব্যক্তি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। লতাপাতা খচিত ধূসর বর্ণের এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট ও প্রস্থ ৪২ ফুট। চারকোন বিশিষ্ট সুলতানি আমলের এই নির্দশনটির ছাদে দুই সারিতে ৬টি গুম্বুজ রয়েছে। মসজিদের মূল দালানে ৩ টি বিশালাকৃতির দরজা রয়েছে। যার মাঝের দরজায় উপরে আরবি হরফে তৎকালীন শিলালিপি বিদ্যমান। মসজিদের ভেতরে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য খচিত অনন্য ৩টি মিহরাব; যার দুটি বড়ো একটি ছোট। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোনে উচু স্তম্ভের উপর একটি উঁচু আসন রয়েছে। যেখানে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন কাজী বা বিচারক। ঐতিহাসিক কসুম্বা মসজিদের সামনে রয়েছে ২৫.৮৩ একরের বিশাল জলাশয় যা কুসুম্বা শাহী মসজিদের দীঘি নামে পরিচিত এবং কসুম্বা মসজিদ হতে অনতি দূরে রয়েছে সোনা দীঘি নামক একটি ছোট্ট জলাশয়। কুসুম্বা মসজিদের পশ্চিমে ৩শ গজ দূরে একটি মসজিদের ধংসাবশেষ পাওয়া যায়। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে কুসুম্বার মসজিদ নির্মাতা সবর খাঁ/সুলায়মান তাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামে মসজিদটি নির্মান করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটির ৩টি গুম্বুজ নষ্ট হয়ে যায়। প্রতœতত্ব বিভাগ পরে এর সংস্কার করে। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর দিকে পাথরের পিলারের উপর তৈরী করা হয়েছিল একটি দোতলা ছোট্টঘর। এ ঘরকে বলা হতো জেনান ঘর বা মহিলাদের নামাজ ঘর। কুসুম্বার পথে প্রবেশের পর রাস্তা ডান পাশে ছোট্ট কালো পাথর পরিলক্ষিত হয়। জনৈক কৃষক হালচাষের সময় তাঁর জমিতে এই পাথরের সন্ধান পেয়ে রাস্তা পাশে এনে রাখেন। পাথরের গায়ে লিপিবদ্ধ লিপি হতে নিশ্চিত হওয়া যায় এই প্রস্তর খন্ডটি হুসেন শাহের স্মৃতি বিজরিত। বর্তমানে কুসুম্বা মসজিদে খাদেম মফিজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ তদারকির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন, যাতে মসজিদে আগত দর্শনার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়। দেশি ও বিদেশী অগনিত মানুষ প্রতিনিয়ত ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ পরিদর্শন করতে আসেন। কুসুম্বা মসজিদে বিভিন্ন ধর্মের অগনিত মানুষ মনোবাসনা পূর্ণ করার সংকল্পে সিন্নি/তবারক বিলি করার জন্য প্রায়শই ছুটে আসেন । স্থানটি ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ হওয়ায় কুসুম্বা মসজিদের ছবি ৫টাকার নোটে সংযোজিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।

মো. আরমান হোসেন

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক

আলোর সন্ধানে

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *