সবার প্রিয় দুখুমিয়া
|তোমরা কি দুখুমিয়ার নাম শুনেছো? সংসারের দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জন্ম নেয়ায় তাঁর নাম রাখা হয় দুখুমিয়া। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম এবং মা জাহেদা খাতুন গৃহিনী। ছোটবেলা থেকেই তিনি অনেক কষ্টে বড়ো হয়েছেন। তাঁর মাত্র দশ বছর বয়সে বাবা মারা যান। সংসারের হাল তুলে নিতে হয় কাঁধে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজে সাহায্য করা প্রতিবেশীর দেখাশুনা, মসজিদের আযান দেয়া সহ মানুষের নানান উপকার করে দিন কাটত তাঁর।
দুখুমিয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে? জানো এই দুখুমিয়ার অনেক প্রতিভা। একদিন তিনি লিখলেন, ‘অমা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?, খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক্ ডেঙাডেং ড্যাং।’ ছোট্টবেলায় গ্রামের মক্তবে বাল্যশিক্ষা লাভ করেন দুখুমিয়া। এরপর চাচার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে আসেন লেখাপড়া করতে কিন্তু সেখানেও পড়তে পারলেন না। দুখুমিয়া ফিরে এলেন পশ্চিমবঙ্গে, তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পান। অভাবের তাড়নায় অল্প বয়সেই দুখুমিয়াকে নেমে পরতে হয় অর্থ উর্পাজনের কাজে; কখনো লেটো গানের দলে, কখনো রেল লাইনে গার্ড হিসেবে, কখনো রুটির দোকানে কাজ করেছেন তিনি। রুটির দোকানে কাজ করতে করতে ছড়া কাটতেন তিনি, আটা মাখছেন শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে আর মুখ দিয়ে ছড়ার খই ফুটছে-“মাখতে মাখতে গমের আটা, ঘামে ভিজল আমার গাটা।” রুটির দোকানে কাজ করে কিভাবে তিনি এমন হাজারো মজার মজার ছড়া-কবিতা লিখে গেছেন তা আজও এক বিস্ময়কর! তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম “অগ্নিবীণা”। তাঁর প্রতিটি লেখাতেই তিনি শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিতদের নায্য অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। তাঁর লেখার বিদ্রোহের আগুনে ব্রিটিশদের ভীত নড়ে ওঠে। বিদ্রোহী কবিতার জন্য তিনি জেলও খেটেছেন। তিনি কবির পাশাপাশি গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবীদ, সৈনিক, দার্শনিকও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।
দুখুমিয়া অত্যন্ত শিশুসুলভ ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘নতুন দিনের মানুষ তোরা আয় শিশুরা আয়, নতুন চোখে নতুন লোকের নতুন ভরসায়।’ এছাড়া দুখুমিয়ার লেখা সবার প্রিয় একটি গান ‘রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ’। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক প্রভৃতি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় শতাধিক। লিখেছেন দু’হাজারেরও বেশী গান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিলিট উপাধি এবং ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘পদ্মভূষণ’ এ তিনি ভূষিত। সাহিত্যর প্রায় প্রত্যেকটি শাখায় তাঁর ছোয়াঁ রয়েছে।
তিনি অনেক ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল লিখেছেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এদেশেই তিনি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) মৃত্যুবরণ করেন।
ছোট্ট সেই দুখু মিয়া ছোট্টবেলা বাধা বিপত্তি দুঃখ কাটিয়ে অনেক বড় হয়েছিলেন। দেশজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সে খ্যাতির কারণে আজও আমরা তাকে চিনি। ছোট্ট সেই দুখু মিয়া হচ্ছেন আমাদের প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
মো. আরমান হোসেন
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
আলোর সন্ধানে নওগাঁ।