জননী আমার

মা, তোমার শরীরের নোনতা স্বাদ কি আগের মতই আছে? ঐ যে খেলা শেষ করে দৌড়ে যেয়ে তোমার শাড়িতে মুখ মুছতাম! তুমি রেগে যেতে তবুও করতাম। কেন বলতো? তুমি যখন বড় বড় হাঁড়িতে রান্না করতে তোমার গা ঘেমে নোনতা স্বাদ আসতো। ঐ স্বাদের টানেই কিন্তু তোমাকে কারনেে অকারনে জড়িয়ে ধরতাম। আমার ছেলে- মেয়েরা কিন্তু আমার মতো করে আমাকে জড়িয়ে ধরেনা। আমার মনে হয় বিদেশি বডি স্প্রে আর পারফিউমের ভীড়ে ওরা মায়ের গায়ের গন্ধ আর নোনতা স্বাদ কোনদিনই পায়নি। মা, তোমার কিন্তু অনেক রাগ ছিল। সন্ধ্যায় যখন হারিকেন জ্বালিয়ে লাঠি হাতে নিয়ে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনকে পড়াতে বসাতে সেই দৃশ্যটা ছিল অপরুপ। হারিকেনের আলোয় তোমার সেই রাগি চেহারা অপরুপ মায়াবি রুপ ধারন করতো। আজকের এই আলো ঝলমলে রাতে প্রসাধনী মাখা আমাদের মতো মায়েদের মুখে সন্তানরা কি সেই “মায়াবতী” মাকে খুঁজে পাবে? দোয়া করো মা আমরা আধুনিক মায়েরা যেন “মায়াবতী” মা হতে পারি। মা, তুমি কিন্তু মাছ খেতে পছন্দ করতে না, দুধ ভাত খেতে। এবার যখন তুমি নওগাঁ বেড়াতে এসেছিলে তখন আমার শাশুড়ির কাছে তোমাকে গল্প করতে শুনলাম ” বিয়ান মাছ আমার খুব পছন্দ কিন্তু অনেক বড় সংসার,কাজ অনেক। মাছ বাছার সুযোগ পেতামনা, দুধ ভাত খেতাম” জানো মা তোমার এই কথা শুনে আমি ঘরে যেয়ে অঝোর ধারায় কেঁদেছি। কত বড় সত্যি থেকে আমরা আজীবন দূরে আছি। আমাদের মাফ করে দিও মা। আমাদের গ্রামের প্রথম শহিদ মিনারটা করা কিন্তু তোমার টাকা দিয়ে। তোমার মত স্বল্প শিক্ষিত মানুষের এই কাজটা কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। দোয়া করো মা আমার জন্য। তোমার মতো “দশভূজা” না হতে পারলেও যেন “সর্বংসহা” হতে পারি। প্রতিবাদী নারীর জন্য এখনো এই বাংলাদেশ তৈরি হয়নি………সালাম সকল ” মা” কে।

গুলশান আরা

মাতা- রওশন আরা

প্রভাষক – বাংলা, নওগাঁ কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজ।

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *