আলোকিত মানুষ রজত গোস্বামী

জীবে সেবায় পরম ধর্ম। হাজার প্রহরের লাখো উপাসনা থেকে এক মুহূর্তের মানব সেবা বেশি গুরুত্ব বহন করে। কারণ জীবমাত্রই স্রষ্টার সৃষ্টি।  এ সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই স্রষ্টার নৈকট্য লাভ সম্ভব। আর এই সেবাই যে মানুষটির ধর্ম। সেবাই যাঁকে বড়ো করে তুলেছে, সেবার জন্যই আমরা যে মানুষটিকে চিনি, এমনই এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এগিয়ে চলেছেন রজত গোস্বামী 

“পরের কারনে স্বার্থ দিয়ে বলি এ জীবন মন সকলি দাও তার মত সুখ কোথাও কি আছে, নিজের কথা ভুলিয়া যাও” কামিনী রায়ের বিখ্যাত দুটি চরণ দিয়ে তাঁর জীবন সুচিত হয়। তিনি এ দুটি চরণকে অন্তরে ধারন করেন, লালন করেন এবং ভালবাসেন।

রজত গোস্বামী ১লা জানুয়ারি ১৯৭০ সালে বদলগাছীর চকজয়দেবপুর গ্রামের প্রনীব কান্ত গোস্বামী উদয় ও সুনন্দা গোস্বামীর ছোট্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি বদলগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। বদলগাছী পাইলট হাইস্কুল (বর্তমান বদলগাছী মডেল পাইলট হাইস্কুল) থেকে মেট্রিকুলেশন পাস ও  ১৯৮৭ সালে বদলগাছী সরকারি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে এনএস সরকারি কলেজ নাটোর থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।  ১৯৯০ সালের ২২ শে মার্চ তিনি সমাজসেবা অফিসের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনের প্রায় ১২ বছর পরে ১০ই মার্চ ২০০৪ সালে সুরঞ্জনা মজুমদারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

অন্তরে ভালো কাজ করার অদম্য ইচ্ছায় তিনি ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষদের ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা কিছু মানুষকে বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য পৃথিবীতে পাঠান যাঁর বহিঃ প্রকাশ আমরা বিভিন্নভাবে তাঁর কাজে পেয়েছি।

বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট ও আলোর সন্ধানে’র উদ্যোগে প্রতিবন্ধি শিশুকে হুইল চেয়ার প্রদান।

তিনি যখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলেন তখন থেকেই শিক্ষক হবার স্বপ্ন বুকে লালন করতেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে সত্যিকারের শিক্ষা আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই তোতাপাখির মত মুখস্ত করবে না।  সে শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে ২০০৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট। যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে পড়াশুনা করিয়ে চলেছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট; বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট এমন এক ইন্সটিটিউট যা শুধু পাঠ্যবইয়ের বিষয়ে আবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।

বিদ্যাসাগরীয়ানদের (বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট এর শিক্ষার্থীদের বিদ্যাসাগরীয়ান বলা হয়)  যেকোন সমস্যা স্বহাস্য সমাধান দেন তিনি। পরম মমতায় সবাইকে তিনি বাবা বলে সম্বোধন করেন। সার্টিফিকেট পরিক্ষার আগের রাতে তিনি মটর সাইকেল নিয়ে শিক্ষাথীদের খোঁজ খবর নিতে রেড়িয়ে পরেন। তার সকল শিক্ষার্থীরা এ ভালবাসার জন্যই প্রতিনিয়ত উন্নতির স্বর্ন শিখরে পৌছাচ্ছে।

বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট এর শীতবস্ত্র বিতরণ।

তিনি এবং বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জরিত । যেমন স্বাধীনতা দিবসে আলোর সন্ধানে সাথে যৌথভাবে রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহন, শীতবস্ত্র বিতরণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, হুইল চেয়ার বিতরণ, রাস্তাঘাট মেরামতসহ সমাজসেবামূলুক কাজে অবদান রাখছে প্রতিনিয়ত। তার জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন সেবার জন্য । আর এ সেবার প্রবাহমাত্রা চালু রাখার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই বৃদ্ধাশ্রম  খোলার পরিকল্পনাও করেছেন।

সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সুযোগ দেন না মনোয়ন করেন না সেবা করার জন্য ।সৃষ্টিকর্তার মনোনীত একজন মানুষ যিনি সেবার জন্য মনোনীত  হয়েছেন এরকম একজন মানুষ রজত গোস্বামী।।যিনি সেবাকেই নিজের ধর্ম মনে করেন। মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্যই বোধকরি তার জন্ম। কারো দু:খ অবলোকিত হলে তিনি পাশে না দাঁড়িয়ে পারেন না।

বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে জন্ম গ্রহণ করুক এমন মহৎপ্রাণ লাখো কোটি রজত । তাহলেই সমাজ পরিনিত হবে সুন্দর সমাজে। এই আলোকিত মানুষ স্বত্তাকে আলোর সন্ধানে পরিবার সম্মান জানাচ্ছে।  এই আলোকছটা ছড়িয়ে পরুক সমাজে সবখানে।

এই আলোকিত স্বত্তার সার্বিক কল্যাণ  দীর্ঘজীবন কামনা করি

গ্রন্থনা:

মাহফুজ আহম্মেদ মাসুম

সদস্য

আলোর সন্ধানে বদলগাছী

 

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *