আলোকিত মানুষ নিমাই চন্দ্র চক্রবর্তী

কিছু মানুষের জন্মই হয় সমাজের কল্যানের জন্য।  মানবতার বিকাশে নিবেদিত প্রাণ মানসিকতা সম্পন্ন এই মানুষরা সমাজের আর্শীবাদ। এমনই একজন সুহৃদ মানুষ নিমাই চন্দ্র চক্রবর্তী। 

নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর গ্রামে ১ আগস্ট ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত কার্ত্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী ও মাতা মৃত পার্বতী চক্রবর্তী। স্বল্প আয়ের পরিবারে তাঁরা ছিলেন সাত ভাইবোন। তাই তাঁদের লেখাপড়া বা ইচ্ছেপূরণ কোনোটাই সহজলভ্য ছিল না। মায়ের একান্ত ইচ্ছায় তাঁকে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হয় গাইবান্ধায় মামার বাড়িতে। ‘নাকাইহাট উচ্চ বিদ্যালয়’ থেকে মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁর অতি উত্তম ফলাফলের জন্য স্থানীয় বদান্য ব্যক্তিবর্গ তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করেন।

মিতব্যয়ী ও অন্তর্মুখী হওয়ায় তিনি সহজেই কারো আনুকূল্য নিতেন না। কারো দান গ্রহণ করলে তার বিনিময়ে শ্রম দিতেন। জয়পুরহাট সরকারি কলেজ ( সে সময় সরকারি ছিল না) থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি এবং ১৯৭৫ সালে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার অদম্য বাসনা থাকলেও ছোট ছোট ভাইবোনদের দিকে তাকিয়ে তা দমন করতে হয়েছে। কর্মজীবনের প্রথমে তিনি মথুরাপুর হাইস্কুলে মাস ছয়েক, পরে গয়েশপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। ইতোমধ্যে তিনি বিএড ( ১ম শ্রেণি) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে তিনি যোগদান করেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুলে। চাকুরিজীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী, ঢাকা (মিরপুর), চট্টগ্রাম, নাটোর, দিনাজপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। অবশেষে রাজশাহী ক্যন্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ হতে অবসরে যান ১ আগস্ট ২০১১ সালে।

তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন তাই নয়, তিনি গভীর অধ্যবসায়ী ছিলেন। শিক্ষানুরাগী, বিদ্যোৎসাহী নিমাই চন্দ্র চক্রবর্তী নিজের লেখাপড়ার সাথে সাথে ভাইবোন, আত্মীয় অনাত্মীয় যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য নিবেদিত। স্বীয় জীবনবাস্তবতা থেকেই দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি বরাবর দুর্বল ও আন্তরিক। বিনা অর্থে বাড়িতে পড়িয়ে বহু শিক্ষার্থীর আজ তিনি গর্বিত শিক্ষক। তাঁরা আজ প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাঁরা বিনত। এতেই তাঁর আনন্দ। এখনও তিনি তাঁর পেনশনের অর্থ থেকে দরিদ্র ও মেধাবীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তা একেবারেই গোপনে কারণ তিনি আত্মপ্রচার পছন্দ করেন না।এসএসসি পাস ফাল্গুনী রানী চক্রবর্তীকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রযত্নে ও প্রেরণায় তাঁর স্ত্রী আজ ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে কর্মজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। সুপরিচিত লেখক ও গবেষক হিসেবেও নন্দিত। এসবের মূল সহযোগী তিনি।

তিনি কেবল পড়েন ও পড়ান না, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিকও বটে। এ যাবৎ পঞ্চাশের অধিক প্রবন্ধ লিখেছেন। “ বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ” শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ অমর একুশে বইমেলায়। বইটি বিদগ্ধ পাঠকমহলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। বাংলাদেশ সরকারি গণগ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন গ্রন্থাগারে তাঁর বইটি রক্ষিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর কিছু কবিতা ও গল্পও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছে। অসুখ তাঁর লেখার উৎসাহকে ম্লান করতে পারে নি। তিনি এখনও লিখছেন। বাংলাদেশ গণগ্রন্থার আয়োজিত ভাষাদিবস এবং মহান স্বাধীনতা দিসের রচনা প্রতিযোগিতার জন্য রচনা লিখছেন। তাঁর হাতের লেখার নান্দনিকতা ও শৈল্পিকতা বিমুগ্ধ করে। লেখা ও পড়াই তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান।

এই আলোকিত স্বত্তার সার্বিক কল্যাণ, আরোগ্যলাভ ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।

গ্রন্থনা:

ওয়ালিউল ইসলাম

সভাপতি

আলোর সন্ধানে

[email protected]

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *