জমি বন্ধক, অলংকার বিক্রি করে স্কুলের জন্য জমি কিনলো শিক্ষকরা…!

চেতনা বড়ো বিচিত্র! সমাজের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার চেতনায় স্বার্থহীন মানুষ প্রায় বিরল। এদেশের বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমায় বসবাস করায় তাঁদের সন্তানদের শিক্ষার চেয়েও ক্ষুধা নিবারণে প্রয়াসই বেশি। আর এ দেশের আদিবাসী সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি অভাবগ্রস্থ টানাপোড়নের জীবন যাপন করে। আদিবাসী সমাজের মানুষের মাঝে শিক্ষা প্রসারের মতো কাজটিও তেমনি কঠিন। এই কঠিন কাজটি করে আসছেন নওগাঁস্থ মহাদেবপুর উপজেলার বড় মহেশপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

১৯৯২ সালে গাছ তলায় ৬৬জন আদিবাসী শিশু নিয়ে শিক্ষা প্রসারের এই যাত্রা শুরু করেন বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হীরা লাল পাহান ও শিক্ষক সুশীল পাহান। পরে মুনিয়া রাজপুত এর দানকৃত জমিতে মাটি দিয়ে তৈরী করা হয় বড় মহেশপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আদিবাসী শিশুদের মাঝে শিক্ষা প্রসাসের ঐকান্তিক মনোবল দেখে এগিয়ে আসে “বাংলাদেশ লুথারেন মিশন-ফিন্নিশ”। অনুপ্রেরণার সেই শূরু থেকে ৩৭৫/- মাসিক বেতনে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা আলো জ্বালানোর কাজ করে চলেছেন তাঁরা। ১৯৯৭ সালে অভিভাবকদের অনুরোধে বিদ্যালয়টিতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই চলতে থাকে শিক্ষা প্রসারের কাজ। ২০০৯ সালে সুহৃদ হীরা লাল পাহান ও সুশীল চন্দ্র পাহান নিজের জমি বন্ধক এবং সুনীতি রাণী মন্ডল ব্যক্তিগত পারিবারিক অলংকার বিক্রি করে স্কুলের জন্য জমি ক্রয় করেন।

২০১০ সালে “বাংলাদেশ লুথারেন মিশন-ফিন্নিশ” এর সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গেলে হতবিহব্বল হয়ে পড়েন সবাই। এরপর ২০১০ সালে ৫০,০০০/- টাকা অনুদান প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বর্তমান বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী। সকলের প্রয়াসে কেনা জমির উপর অনুদানের টাকায় নতুন স্কুল ভবন তৈরীর কাজ শুরু হয়। আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা ফসলের কিছু অংশ অথবা শিক্ষার্থীদের দেয়া মাসিক ১০/- করে বেতনে ৩০০/- টাকা বেতনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন স্কুলের শিক্ষকরা। 

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বমোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহন করে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যে স্বপ্নের স্কুল তাঁরা গড়তে চলেছেন তাঁর ছাউনির জন্য টিন কেনার অর্থও নেই। অর্থের অভাবে থেমে আছে নতুন ভবনের কাজ। নতুন ভবনের ছাউনির জন্য এখনো প্রায় ২৫ ব্যান্ডেল টিনের প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সরকার সহ সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শুভ দৃষ্টি। আসুন শিক্ষা প্রসারের জন্য যাঁরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে ব্যক্তিগত সুখকে উৎসর্গ করেছে তাঁদের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। বড় মহেশপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করণসহ বেতনভাতাদিসহ সকল সুবিধাদি প্রদানে সরকার এগিয়ে আসুক এই কামনা করি।

হীরা লাল পাহান, সুশীল চন্দ্র পাহান, সুনীতি রাণী মন্ডল, রুবি রাণী প্রামনিক নামের সত্যিকারের এই আলোকিত মানুষদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমাজের সকল স্তরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আমাদের স্বম্মিলিত প্রয়াসে আলোকিত হোক বিশ্ব। শুভ শক্তির জয় হোক; ভালো মানসিকতার উত্থান হোক।

মো. আরমান হোসেন

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক

আলোর সন্ধানে

০১৭৪৬৩২৯৭৬৫

[email protected]

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *