আব্বার ২০০টাকা!
|খুব সকালে ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙলো। ফোনটা আলোর সন্ধানে’র সদস্য সজলের। সে জানালো “ভাই নওগাঁ সদরে আসতেছি রক্ত দিতে, আপনার একটু সময় হবে।” বললাম- “ঠিক আছে এসো দেখা হবে।” আজ আব্বার আসার কথা তাই অপেক্ষায় ছিলাম তাঁর। সাড়ে নটা নাগাদ তিনি আসলেন। তিনি এসেছেন মূলত আমার সাথে দেখা করতে। প্রতিবারই দেখা করতে আসলে কোন কোনবার আমার চাওয়াতে কখনো তিনি নিজেই অল্পবিস্তর কিছু টাকা দিয়ে থাকেন আমাকে। যদিও সংগঠনের জন্য যাতায়াত বাবদই প্রতিমাসে বিশেষভাবে টাকা দিয়য়ে থাকেন। আব্বার সাথে দেখা করলাম অল্প স্বল্প কথা হলো। তারপর চলে যাবার আগে তিনি আমাকে এবার ২০০টাকা দিলেন। স্বভাবতই আমি একটু খেয়ালি যখন যা ইচ্ছা তাই করি। বিশেষত ভালো কাজ করতেই ভালোবাসি। বিশ্বাস এই যে, “অন্তত সৃষ্টকর্তা সবাইকে ভালো কাজ করার সুযোগ দেয় না।” নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয় এ অনুভূতির জন্য।
প্রতিনিয়তই আমরা রক্ত দিই। নিত্যকার কার্যক্রমের মধ্যে রক্তদান অন্যতম। নওগাঁ সদর হাসপাতালে আসলাম। হাসপাতালে এসে জানলাম অতিদরিদ্র পরিবারের দুজন বাচ্চার রক্ত প্রয়োজন। সব ঠিকই ছিলো বিপত্তি বাধলো নার্সদের কথা শুনে; উনারা জানালেন রক্ত নেয়ার ব্যাগ তাঁদের সঞ্চয়ে নেই। বিভাগের ইনচার্জ নাকি ঢাকাতে এসব নিতেই গেছেন। দরিদ্র মানুষটি দায়িত্বরত নার্সের কাছে কাকুতি-মিনতি করতে শুরু করেছে। একে তো দরিদ্র পরিবার তার উপর দুটো ছেলের দুজনেরই রক্তশূন্যতায় প্রতিমাসে রক্ত দিতে হয়। থ্যালাসেমিয়া আরকি। এখন বিশেষত শিশুদের এই রোগটা প্রচন্ড বাজে প্রভাব ফেলছে। বাচ্চাদের এ রোগ এতো পরিমাণ হওয়ার কারণটা অবশ্য আমার জানা নেই।
সমস্যা বোঝা যাচ্ছিল কিন্তু তারপরও এগিয়ে গিয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম সমাধান কি সমস্যার? নার্স জানালেন রক্ত সংরক্ষণের জন্য দুটা ব্যাগ লাগবে। আমি বললাম ঠিক আছে আমি নিয়ে আসতেছি রক্তের পরীক্ষা শুরু করুন।ফার্মেসীতে গেলাম রক্ত সংরক্ষণের জন্য দুটো ব্যাগ নিতে। ফার্মেসীর ভাই রক্ত সংরক্ষণের ব্যাগ দিলেন। কত টাকা জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন ২০০টাকা। ম্যানিব্যাগ খুলে দেখি ২০০টাকায় আছে, এক টাকা বেশিও না কমও না। সকালে বেলা আব্বার দেয়া ২০০টাকা। এজন্যই বলি হঠাৎ আব্বাই কেন আসবে আর ২০০টাকায় বা কেন দেবে।
সবই তাঁর ইচ্ছা। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিনটা সুন্দর কাজের মাধ্যমে শুরু করার সুযোগ দেয়ার জন্য..।ধন্যবাদ আলোর পথিক রক্তদানকারি সান্তাহারের বন্ধু সোবহান ও নিয়ামতপুরের বন্ধু বক্করকে।